• মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

বিভিন্ন আলামত উদ্ধার

খুলনার চাঞ্চল্যকর তাজমিরা হত্যার রহস্য উদঘাটন 

প্রকাশ:  ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০২:৫৮
শেখ নাদীর শাহ্, খুলনা

খুলনার পাইকগাছায় চাঞ্চল্যকর তাজমিরা খাতুন (৩৮) হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) তিন দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে তার ভাসুর (স্বামীর ভাই) মীর শহিদুল্লাহ হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে।

আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তি মোতাবেক হত্যায় ব্যবহৃত গামছা, ছুরি সহ অন্যান্য আলামত উদ্ধার করেছে পুলিশ। জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে তাকে হত্যা করা হয়।

এর আগে মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) ভোরে উপজেলার চাঁদখালীর ধামরাইল বেড়িবাঁধের অভ্যন্তরে ধান ক্ষেত থেকে তাজমিরার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ঐদিন পুলিশ লাশের সাথে তার স্বামী মীর ওবায়দুল্লাহ ও সেঝ ভাসুর মীর শহিদুল্লাহকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেয়। তাদেরকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে স্বামীকে ছেড়ে দিলেও পুলিশ তার ভাসুর মীর শহীদুল্লাহকে বুধবার ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী গ্রহনের জন্য আদালতে পাঠায়।

এর আগে নিহতের ভাই উপজেলার মৌখালীর আলমগীর গাজী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

পুলিশ জানায়, গত ৩০ জানুয়ারি রাতে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে উপজেলার চাঁদখালীর ধামরাইলের ওবায়দুল্লাহ মীরের স্ত্রী ও ৩ কন্যা সন্তানের জননী গৃহবধূ তাজমীরা খাতুন ওরফে ববিতাকে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে ভাসুর মীর শহিদুল্লাহর চায়ের দোকানের মধ্যে গামছা দিয়ে শ্বাসরোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করে বাড়ির ৫০ গজ দূরে নিজেদের ধান ক্ষেতের আইলে লাশ ফেলে রাখে।

জানা যায়, ২০১৮ সালে নিহতের স্বামী ওবায়দুল্লাহ মীরের সাথে তার বড় ভাই মৃত সাংবাদিক আব্দুল্লাহ মীরের ছেলে খুলনার বাসিন্দা ইমন ও মেয়ে মৌসুমীর মধ্যে ৭ শতক জমি নিয়ে বিরোধ শুরু হয়। এক পর্যায়ে ইমন ও মৌসুমী দুই ভাই-বোন চাচা কামরুল মীরের কাছে উক্ত বিরোধপূর্ণ জমি বিক্রয় করলে ত্রিমুখি বিরোধ দেখা দেয়। এ নিয়ে বহুবার স্থানীয় সালিশিতে মিমাংসা না হলে সর্বশেষ ওবায়দুল্লাহ ও কামরুল মীর পাইকগাছার নির্বাহী কোর্টে পাল্টা-পাল্টি ১৪৪ ধারার মামলা করলে পুলিশ দু’পক্ষকে নোটিশ করে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে নির্দেশ দেয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আনজীর হোসেন জানান, জমির বিরোধকে কেন্দ্র করে তৃতীয় পক্ষ তাদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য চাচা কামরুল মীর ও ইমন-মৌসুমী দুই ভাই-বোনকে ফাঁসাতে ওবায়দুল্লাহর সেঝো ভাই চা দোকানি শহিদুল্লাহ মীরসহ কয়েকজন মিলে খুঁনের পরিকল্পনা করে আপন ভাই ওবায়দুল্লাহর স্ত্রী তাজমিরাকে টার্গেট করে। পরিকল্পনামতে, গত ৩০ জানুয়ারি সন্ধ্যায় জমি বুঝে দেবার কথা বলে ভাসুর শহিদুল্লাহ গৃহবধূ তাজমিরাকে তার চায়ের দোকানে ডেকে নেয়।

ঐদিন রাতে খাবার খেয়ে স্বামী ওবায়দুল্লাহ এক রুমে ও মেয়ে তামান্নাকে নিয়ে অন্যরুমে তাজমিরা ঘুমিয়ে পড়েন। এরপর রাত ১২টার দিকে তাজমিরাকে তার ভাসুর শহিদুল্লাহ পুনরায় নিজের চায়ের দোকানে ডেকে নেয়। এরপর দোকানের দরজা বন্ধ করে ভাসুরসহ কয়েকজন মিলে তাজমিরার গলায় গামছা পেচিয়ে তাকে শ্বাসরোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে তাদের ধান ক্ষেতের আইলে নিয়ে ঘাড়ে ছুরি দিয়ে কয়েকটি পোচ দিয়ে লাশ সেখানেই ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।

পরের দিন ৩১ জানুয়ারি সকালে লাশ পড়ে থাকার খবরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য খুমেক হাসপাতালে পাঠায়। এ ঘটনায় নিহতের ভাই মৌখালীর আলমগীর গাজী বাদী হয়ে ঐ দিনই অজ্ঞাতনামা আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

পাইকগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ জিয়াউর রহমান জানান, চাঞ্চল্যকর তাজমিরা হত্যা মামলায় স্বামী মীর ওবায়দুল্লাহর বড় ভাই শহিদুল্লাহর স্বীকারোক্তি মোতাবেক হত্যায় ব্যবহৃত আলামত উদ্ধার করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম

আলামত,উদ্ধার,উদঘাটন,রহস্য,তাজমিরা হত্যা,খুলনা

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close